AllBanglaNews24

প্রকাশিত: ২১:২০, ৩১ জুলাই ২০২০
আপডেট: ২১:২৩, ৩১ জুলাই ২০২০

ঈদুল আজহায় করণীয় ও বর্জনীয়

ঈদুল আজহায় করণীয় ও বর্জনীয়

ছবিঃ সংগৃহীত

মুসলিম উম্মাহর জীবনে অন্যতম একটি ধর্মীয় উৎসব ‘ঈদুল আজহা’।  আত্মত্যাগ ও মানবতার বার্তা নিয়ে প্রতিবছর মুসলমানের সামনে হাজির হয় এ উৎসব। জিলহজের ১০ তারিখ মহাসমারোহে পালিত হয় বিশ্ব মুসলিমের ঐক্য ও সৌহার্দ্যপূর্ণ এ ইবাদত।

ঈদুল আজহায় করণীয়-

গোসল করা : ঈদের নামাজের আগে গোসল করা সুন্নত। আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসূল (সা.) ঈদের নামাজে যাওয়ার আগে গোসল করতেন। (মুয়াত্তা ইমাম মালিক)।

উত্তম পোশাক পরিধান : ঈদের দিন রাসূল (সা.) ভালো পোশাক পরিধান করতেন। হাদিসে আছে, রাসূল (সা.) এর লাল ও সবুজ ডোরার একটি চাদর ছিল, তিনি তা দুই ঈদ ও জুমার দিন পরিধান করতেন।

সুগন্ধি ব্যবহার : সুগন্ধি ব্যবহার সুন্নত। আর ঈদের দিনে রাসূল (সা.) বিশেষভাবে সুগন্ধি ব্যবহার করতেন। রাসূল (সা.) এর তিনটি পছন্দনীয় জিনিসের মধ্যে একটি হলো সুগন্ধি। তাই ঈদের দিনের পোশাক পরিধানের পর সুগন্ধি ব্যবহার করা উত্তম।

ঈদের দিনে খাওয়া : কোরবানির দিনে ঈদের নামাজের আগে কিছু না খাওয়া মোস্তাহাব। নবী করিম (সা.) ঈদুল আজহার দিন ঈদের নামাজ আদায় পর্যন্ত কিছুই খেতেন না। (তিরমিজি, ইবনে মাজাহ)।

ঈদগাহে যাওয়া : ঈদগাহে একপথ দিয়ে যাওয়া ও অন্যপথ দিয়ে ফেরা সুন্নত। (বুখারি, হাদিস : ৯৮৬)। সম্ভব হলে ঈদগাহে হেঁটে যাওয়াও সুন্নত। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১০৭১)।

তাকবির পাঠ করা : ঈদের দিন তাকবির পাঠের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালাকে বেশি বেশি স্মরণ করা সুন্নত। পুরুষরা এ তাকবির উঁচু আওয়াজে পাঠ করবে, মেয়েরা নীরবে। এ তাকবির জিলহজ মাসের ৯ থেকে ১৩ তারিখ পর্যন্ত পাঠ করবে। (ফাতহুল বারি : ২/৫৮৯)।

ঈদের নামাজ আদায় : ঈদের নামাজ সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ। ঈদের নামাজ সব নফল নামাজের মধ্যে ফজিলতপূর্ণ। ঈদের নামাজের আগে ও ফজরের নামাজের পরে কোনো নামাজ নেই। ঈদের নামাজের কোনো আজান ও ইকামত নেই।

শুভেচ্ছা বিনিময় : ঈদের দিনে ছোট-বড় সবার সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করা সুন্নত। ঈদের দিনে সাহাবায়ে কিরামদের সম্ভাষণ ছিল ‘তাকাব্বাল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকা’।

কোরবানি করা : ঈদুল আজহার দিনে সামর্থ্যবান ব্যক্তিদের ওপর কোরবানি করা ওয়াজিব। কোরবানির গোশত নিজে খাবে, নিজের পরিবারবর্গকে খাওয়াবে, আত্মীয়স্বজনকে হাদিয়া-তোহফা দেবে ও গরিব-মিসকিনকে দান করবে। মোস্তাহাব হলো, কোরবানির গোশত তিন ভাগে ভাগ করা। ১. নিজ পরিবার-পরিজনের জন্য এক ভাগ। ২. আত্মীয়স্বজনের জন্য এক ভাগ। ৩. দরিদ্রদের জন্য এক ভাগ। আর যদি পরিবারের লোকসংখ্যা বেশি হয়, তাহলে কোরবানির সব গোশত খেলেও অসুবিধা নেই। (শামি : ৫/২০৮)।

পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখা : ঈদুল আজহায় পশুর রক্ত, আবর্জনা ও হাড় থেকে যেন পরিবেশ দূষিত না হয়, সেদিকে প্রত্যেক মুসলমানের সতর্ক হওয়া উচিত। কোরবানি শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রক্ত, আবর্জনা ও হাড় নিরাপদ দূরত্বে নির্দিষ্ট জায়গায় ফেলে দিতে হবে। বেশির ভাগ লোকই নিজস্ব জায়গায় পশু জবাই করে। এতে অলিগলিতে বর্জ্য যেমন পড়ে, তেমনি রক্ত পড়ে দূষিত হয় পরিবেশ, চলাচলের অনুপযোগী হয় রাস্তাঘাট। তাই ঈদুল আজহায় পশুর রক্ত, আবর্জনা পরিষ্কারে সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি ব্যক্তিগতভাবেও উদ্যোগ গ্রহণ করে পরিবেশ দূষণের হাত থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য কাজ করতে হবে।

মনে রাখতে হবে, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ইমানের অঙ্গ।

ঈদুল আজহায় বর্জনীয়-

ঈদের দিনে রোজা : ঈদের দিনে রোজা রাখা হারাম। ‘রাসূল (সা.) ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার দিনে রোজা রাখতে নিষেধ করেছেন। (সহিহ বোখারি ও মুসলিম)।

ঈদের দিনকে কবর জিয়ারতের জন্য নির্দিষ্ট করা : ঈদের দিনকে কবর জিয়ারতের বিশেষ দিন মনে করে জিয়ারত করা বিদাত (সহিহ ফিকহুস সুন্নাহ : ১/৬৬৯), তবে পূর্বনির্ধারিত রুটিন ছাড়া হঠাৎ সুযোগ হয়ে গেলে একাকী কেউ জিয়ারত করলে দোষণীয় নয়।

ঈদের নামাজ না পড়ে আনন্দ-ফুর্তি : অনেকে ঈদের আনন্দে মশগুল হয়ে নতুন জামা-কাপড় পরিধান, সেমাই, ফিরনি ইত্যাদি নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে, ঈদের নামাজ আদায় করার কথা ভুলে যায়। অথচ এই দিনে ঈদের নামাজ ও কোরবানি করাই হচ্ছে মুসলমানদের মূল কাজ।

মুসাফাহা-কোলাকুলি এ দিনে জরুরি মনে করা : ঈদগাহে বা ঈদের দিন সাক্ষাৎ হলে মুসাফাহা ও মুআনাকা (কোলাকুলি) করতেই হবে এমন বিশ্বাস ও আমল করা বিদাত। তবে এমন বিশ্বাস না করে সালাম ও মুসাফাহার পর মুআনাকাতে (গলায় গলা মেলানো) কোনো অসুবিধা নেই। কারণ মুসাফাহা ও মুআনাকা করার মাধ্যমে পারস্পরিক সম্পর্ক বৃদ্ধি হয়। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘একদা হাসান ইবনে আলী (রা.) নবী করিম (সা.) এর কাছে এলেন, তিনি তখন তাকে জড়িয়ে ধরেন ও মুআনাকা (কোলাকুলি) করেন।’

কোরবানির কোনো কিছু বিক্রি করা : কোরবানির গোশত, চামড়া ও এর কোনো অংশ বিক্রি করা যাবে না। অর্থাৎ বিক্রি করে নিজে উপকৃত হওয়া যাবে না। এমনকি কসাইকে পারিশ্রমিকস্বরূপ গোশত দেওয়া নিষিদ্ধ। (বোখারি, হাদিস : ১৭১৭, মুসলিম, হাদিস : ১৩১৭)। তবে সাধারণভাবে তাকে খেতে দেয়ায় অসুবিধা নেই।

 

অল বাংলানিউজ ২৪

শেয়ার করুন

Advertising
allbanglanewspaper-link

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়

    Add