AllBanglaNews24

প্রকাশিত: ১৮:০৯, ২৮ অক্টোবর ২০২০

রক্তক্ষরণে মারা যাওয়া কিশোরীর লাশও দেখতে আসেনি পাষণ্ড স্বামী

রক্তক্ষরণে মারা যাওয়া কিশোরীর লাশও দেখতে আসেনি পাষণ্ড স্বামী

ছবি: সংগৃহীত

টাঙ্গাইলের বাসাইলে বিয়ের ৩৪ দিনের মাথায় মারা যাওয়া ১৪ বছরের কিশোরী নুর নাহারের লাশ দেখতে আসেননি পাষণ্ড স্বামী। এছাড়া মৃত্যুর তিনদিন পার হলেও মামলা করেননি কেউ।

স্থানীয়রা জানায়, পারিবারিক সম্মতিতে এ বিয়ে হওয়ায় মামলা করতে ভয় পাচ্ছেন নুর নাহারের পরিবারের লোকজন। তবে ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছে প্রশাসন।

এদিকে, নিহত নুর নাহারের স্বামীর বাড়ির পক্ষ থেকে গ্রাম্য সালিশে বিষয়টি মীমাংসার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। তবে স্ত্রীর লাশ দেখতে আসেননি স্বামী প্রবাসী রাজিব খান। আইনি প্রক্রিয়ায় এর বিচার না হলে বাল্যবিয়ের বলি কিশোরীর পরিবার ন্যায়বিচার পাবে না বলে সচেতন মহলের দাবি।

নুর নাহারের বাবা রিকশাচালক ও মা পোশাক শ্রমিক। অভাবের সংসারে তাদের মধ্যে ঝগড়া লেগেই থাকতো। এ কারণে দিনমজুর নানা চার বছর বয়সে নুর নাহারকে তার বাড়িতে নিয়ে আসেন। এরপর তাকে স্কুলে ভর্তি করান।

আরো পড়ুন: স্বামীর বর্বর যৌনসঙ্গমে লাশ হলেন কিশোরী স্ত্রী

এ বছর কলিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণিতে পড়ছিলেন নুর নাহার। নানা লাল খানও দরিদ্র হওয়ায় ২০ সেপ্টেম্বর নুর নাহারকে উপজেলার ফুলকি পশ্চিমপাড়া গ্রামের আব্দুর রশিদের ছেলে প্রবাসী রাজিব খানের সঙ্গে বিয়ে দেন। অল্প বয়সে বিয়ে হওয়ায় রক্তক্ষরণ শুরু হয় নুর নাহারের। রক্তক্ষরণ বন্ধ না হওয়ায় বিষয়টি নিয়ে নুর নাহার ও রাজিবের পরিবারে আলোচনা হয়। পরে রাজিবের পরিবারের পক্ষ থেকে গ্রাম্য কবিরাজ দিয়ে চিকিৎসা করানো হয়।

২২ অক্টোবর নুর নাহারকে ভর্তি করা হয় টাঙ্গাইলের একটি প্রাইভেট ক্লিনিকে। ওই ক্লিনিকে নুর নাহারকে তার পরিবারের কাছে বুঝিয়ে দিয়ে স্বামী রাজিব ও তার পরিবার কৌশলে সেখান থেকে কেটে পড়েন। এরপর অবস্থার অবনতি হলে নুর নাহারের স্বজনরা তাকে মির্জাপুর কুমুদিনী হাসপাতালে ভর্তি করেন। তাকে চিকিৎসা করানোর মতো পরিবারের হাতে তখন টাকাও ছিল না।

গ্রামবাসীরা প্রায় ৬০ হাজার টাকা তুলে দিলে নুর নাহারকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয় তার পরিবার। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৫ অক্টোবর ভোরে নুর নাহারের মৃত্যু হয়। ময়নাতদন্ত শেষে তাকে নানার বাড়ির কবরস্থানে দাফন করা হয়।

নুর নাহারের নানা লাল খান বলেন, মৃত্যুর পর নুর নাহারের স্বামী রাজিব তার লাশ পর্যন্ত দেখতে আসেনি। মূলত স্বামীর কারণেই আমার নাতনি মারা গেছে।

কলিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক জাকির হোসেন বলেন, আমরা নিয়মিতই শিক্ষার্থীদের খোঁজখবর নেই। কিন্তু হঠাৎ করেই গোপনে নুর নাহারকে তার পরিবার বিয়ে দেয়। নুর নাহার মেধাবী ছাত্রী ছিল। অষ্টম শ্রেণিতে তার রোল নম্বর দুই ছিল। বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক। আমরা একজন মেধাবী ছাত্রীকে হারালাম।

বাসাইলের ইউএনও শামছুন নাহার স্বপ্না বলেন, বাল্যবিয়ের শিকার হয়ে অষ্টম শ্রেণির একজন ছাত্রীর মৃত্যু হয়েছে। বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক। শুধু আইন দিয়ে নয়, সামাজিক সচেতনতাই পারে বাল্যবিয়ে নির্মূল করতে।

বাসাইল থানার ওসি হারুনুর রশিদ বলেন, এ ঘটনায় কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
 

অল বাংলানিউজ ২৪

শেয়ার করুন

Advertising
allbanglanewspaper-link

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়

    Add