বৈশাখ ও জ্যৈষ্ঠ- এই দুই মাস গরমকাল। ঋতুচক্রে গরমকাল হলেও, ফলের বিবেচনায় এই দুই মাসকে বলা হয় মধুঋতু, জ্যৈষ্ঠ মাস হলো মধুমাস। মধুমাসে কত ফলই না মেলে। তবে এখন বসন্তের মাঝামাঝি সময়ে আগাম গ্রীষ্মের ফলে বাজার সয়লাব। বাজারে, রাস্তায়, অলি-গলিতে ভ্যানে করে ফল বিক্রির প্রবণতা বেশ নজর কাড়ছে। রাস্তায় বের হলেই চোখে পড়ছে তরমুজ, পেয়ারা, কদবেল, কমলা, আনারসসহ নানা মৌসুমী ফল। এদিকে ফলের আড়ত থেকে শুরু করে রাস্তার ফুটপাতেও দেখা গেছে বাহারি ফলের সমারোহ। আগাম গ্রীষ্মকালীন ফলের সুবাসে মাতোয়ারা হয়ে উঠেছে বাজারের চারপাশ। নগরের নানা শ্রেণির ক্রেতাদের ভীড়ে পুরো দমেই চলছে বেচা-কেনা।
শুক্রবার (১৯ মার্চ) সকালে নগরের বিআরটিসি মার্কেট, ফিরিঙ্গীবাজারে আড়ত ও স্টেশন রোডের ফলমণ্ডি ঘুরে দেখা যায়, ট্রাক থেকে এক এক করে নামানো হচ্ছে বিভিন্ন ধরণের ফলের ঝুঁড়ি। মান যাচাই করতে নানা জাতের ফল পরখ করে দেখছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা। ক্রেতা-বিক্রেতাদের হাঁক-ডাকে মুখরিত ছিল পুরো বাজার।
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বাজারে তরমুজ, পেয়ারা, কতবেলসহ নানা মৌসুমী ফল আসতে শুরু করেছে। এখন বেশিরভাগই হাইব্রিড জাতের তরমুজের আমদানি হচ্ছে। দেশি জাতের তরমুজ বাজারে আসতে আরো কিছুদিন সময় লাগবে। বাজারে এখন পতেঙ্গা, অমৃত, সুইট বেবি, মিলন মধুর, আসাই, পাটনাগরাসহ নানা নামের হাইব্রিড জাতের তরমুজ বিক্রি হচ্ছে। ফিরিঙ্গীবাজারের আড়তে সব ধরনের ফল পাইকারে বিক্রি হয়। আবহাওয়া ভালো থাকায় এবছর তরমুজের বাম্পার ফলন হয়েছে। পাশাপাশি আনারস ও কলার ফলনও হয়েছে আশানুরূপ।
ফলমণ্ডির পাইকারি বাজার ঘুরে দেখা যায়, মাল্টার ক্যারেট (১৫ কেজি) বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৬০০ টাকায়, কমলার ক্যারেট (২৪ কেজি) বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৭০০ টাকায়, আপেলের ক্যারেট (১৮ কেজি) ২ হাজার ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তাছাড়া প্রতিকেজি আঙ্গুর ২৫০ টাকায়, পেয়ারা মানভেদে কেজি প্রতি ৫০ থেকে ৮০ টাকা, কতবেল প্রতি পিস ৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
ফিরিঙ্গীবাজার ফলের আড়তে আসা খুচরা ফল বিক্রেতা আব্দুল গণি সিভয়েসকে জানান, সবে চৈত্র মাস শুরু হয়েছে। বৈশাখ মাস শুরু হলে গ্রীষ্মকালীন ফলে বাজার আরো ভরপুর হয়ে উঠবে। গ্রীষ্মের লোভনীয় ফল আম, কাঁঠাল, লিচু তো এখনো বাজারে আসেনি। তবে এখন খুব গরম পড়ছে। এ সময় সাধারণ মানুষ তরমুজ খেতে বেশি পছন্দ করে। তাই পাইকারদের কাছ থেকে তরমুজ কিনতে এসেছি। পুরোপুরি মৌসুম না আসায় দাম একটু বাড়তি।
নগরের স্টেশন রোডে ফল ব্যবসায়ী আবদুস সোবহান সিভয়েসকে জানান, এখন যা তরমুজ আমদানি হচ্ছে সবই হাইব্রিড জাতের। আর কিছুদিনের মধ্যে আমাদের দেশীয় তরমুজ আসবে। আকারভেদে তরমুজের দাম নির্ধারণ করা হয়ে থাকে। মাঝারি আকারের তরমুজ মানভেদে ৬০ থেকে ১০০ টাকা, বড় আকারের তরমুজ মানভেদে ১২০ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তাছাড়া আমরা বেশিরভাগ আনারস রাঙামাটি থেকে আমদানি করে থাকি। প্রতি জোড়া আনারস প্রতি জোড়া মানভেদে ৩০ থেকে ৫০ টাকা, বেল প্রতিটি ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
রিয়াজউদ্দিন বাজারে তরমুজ কিনতে আসা আইনজীবী মোহাম্মদ ইমন সিভয়েসকে বলেন, ‘পূর্ণাঙ্গ মৌসুম না আসলেও বাজার এখন হাইব্রিড তরমুজে সয়লাব। তবে হাইব্রিড জাতের তরমুজ কিনতেও ভয় লাগে। এ ধরণের তরমুজের স্বাদ তেমন একটা মিষ্টি হয় না। ভেতরে অনেক সময় লালচে সাদা রঙের হয়ে থাকে। তাই লাল রঙ ফেরাতে অনেক সময় কিছু অসাধু ব্যবসায়ী তরমুজের ভেতরে সিরিঞ্জ দিয়ে তরমুজের ফ্লেভারযুক্ত লাল রঙ পুশ করে। আমরা সাধারণ ক্রেতারা তো এসব চোখে দেখছি না। বাচ্চারা তরমুজ আর বেলের শরবত খেতে পছন্দ করে। তাই এসব ফল কিনতে এসেছি। তবে আগাম মৌসুমী ফল বাজারে আসায় দামটা একটু বেশি।’
চট্টগ্রাম ফল আড়ত মালিক সমিতির সহ-সভাপতি লায়ন দুলাল চন্দ্র দে সিভয়েসকে বলেন, ‘বৈশাখ মাস আসার আগেই তরমুজ, কদবেল, পেয়ারাসহ বিভিন্ন ফলের সয়লাব হয়েছে। বেচা-বিক্রিও ভালো। তবে পরিবহণ খরচ এখন দ্বিগুণ হয়েছে। পাশাপাশি পচনশীল হওয়ায় দ্রুত বিক্রি করা না গেলে তরমুজ, আনারস, কলা নষ্ট হয়ে যায়। তাই এসব ফল দ্রুত বিক্রি করতে হয়। সামনে রোজা আসছে। রোজায় ফলের চাহিদা বাড়ে। তাই আশা করছি রোজাতে বেচাবিক্রি আরো ভালো হবে।’
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন সিভয়েসকে বলেন, ‘প্রতিবছরই আগাম গ্রীষ্মের ফল বাজারে আসে। এ সময় কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ফলে ফরমালিনসহ নানা রকম ভেজাল দেয়ার চেষ্টা করে। তাই বাজারে আসা এসব নতুন ফল কেনার সময় ক্রেতাদের সচেতন থাকা জরুরি। পাশাপাশি ফলে ভেজাল দেয়া এসব অসাধু ব্যবসায়ীদের চিহ্নিত করে নগদ অর্থ দণ্ডের পাশাপাশি প্রয়োজনে জেল-জরিমানা নিশ্চিত করতে হবে।’
