AllBanglaNews24

প্রকাশিত: ১৭:০৭, ৫ মার্চ ২০২০

বিশ্বের সবচেয়ে বেশি গম্বুজের মসজিদ

বিশ্বের সবচেয়ে বেশি গম্বুজের মসজিদ

ছবি : সংগৃহীত

যুগ যুগান্তের স্বাক্ষী হিসেবে টাঙ্গাইলের বিভিন্ন পথে প্রান্তরে, মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে বিভিন্ন স্থাপনা। প্রায় প্রত্যেকটা উপজেলায় রয়েছে কালের স্বাক্ষী বিভিন্ন জমিদার বাড়ি। যুগে যুগে রাজা-বাদশাহ-জমিদারগন নিজেদের প্রাচুর্যের প্রমান রাখতে, আভিজাত্যপূর্ণ জীবনযাত্রার চিহ্ন ছড়িয়ে দিতে তৈরি করতেন দৃষ্টিনন্দন বিভিন্ন স্থাপনা। সেই স্থাপনাগুলো যুগ যুগ পেরিয়ে এখনো টিকে আছে। বর্তমান সময়ের প্রত্নতাত্ত্বিকদের কাছে পুরনো সেই স্থাপনাগুলো গবেষণার বিষয়। প্রত্নতত্ত্ব পছন্দ করে এমন কারো কাছে বিস্ময়ের খোরাক, ভাবনার খোরাক। স্থাপনার মাধ্যমে বিভিন্ন যুগের নির্মান শৈলী সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। আধুনিক যুগের নির্মান শৈলীকে পরবর্তী প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দিতে ঐতিহ্যবাহী টাঙ্গাইল জেলার গোপালপুর উপজেলার নগদা শিমলা ইউনিয়নের  দক্ষিণ পাথালিয়া গ্রামে নির্মিত হচ্ছে এক ইতিহাস সৃষ্টিকারী ইবাদতখানা। যা পরবর্তী প্রজন্মের কাছে যুগ যুগান্তর ধরে বয়ে নিয়ে যাবে এই প্রজন্মের ইতিহাস। 

বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ২০১ গম্বুজ বিশিষ্ট এই মসজিদ কমপ্লেক্সটি নির্মান শুরু হয়েছে বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম কল্যান ট্রাস্টের মাধ্যমে। ২০১৩ সালের ১৩ই জানুয়ারি বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলামের মা রিজিয়া খাতুন এই মসজিদের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। প্রাথমিক বাজেটে আনুমানিক ১০০ কোটি টাকার কথা থাকলেও ইতিমধ্যে বাজেট বাড়াতে হয়েছে কয়েকবার। ২০১৭ সালে নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এখনো চলছে নির্মাণ কাজ। নির্মাণ শেষে মক্কা নগরী থেকে পবিত্র কাবা শরীফের ইমাম এসে নামাজের মাধ্যমে উদ্ভোদনের কথা রয়েছে। 

প্রায় ১৫০০০ হাজার মুসল্লীর ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন মসজিদটি হতে যাচ্ছে দ্বিতল বিশিষ্ট। দৈর্ঘ্যে ১৪৪ ফিট বা ৪৪ মিটার এবং প্রস্থে ১৪৪ ফিট বা ৪৪ মিটার। মোট গম্বুজ থাকছে ২০১ টি। যা এখনো পর্যন্ত  বিশ্বে নির্মিতব্য মসজিদগুলোরধ্যে সর্বাধিক। মূল একটি গম্বুজকে ঘিরে চারপাশে আরো ২০০টি গম্বুজের অবস্থান। মূল গম্বুজের ব্যাস ৮১ ফুট বা ২৫ মিটার। অন্যান্য গম্বুজের ব্যাস ১৭ ফুট বা ৫.২ মিটার। সোনালী রঙের চাকচিক্যময় এই মসজিদের আরেকটি প্রধান সৌন্দর্য মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকা সুউচ্চ ৯টি মিনার। মসজিদের চার কোনায় রয়েছে ১০১ ফুট উচ্চতার চারটি মিনার। এই চারটি মিনারের পাশেই ৮১ ফুট উচ্চতার আরো চারটি মিনার রয়েছে। মসজিদের গায়ে মোট ৮টি মিনার এবং তার পাশে নির্মিত হচ্ছে ৪৫১ ফুট বা প্রায় ৫৭ তলার সময়ান উচ্চতা বিশিষ্ট আরো একটি মিনার। যা বাংলাদেশের সর্বোচ্চ উচ্চতার এবং বিশ্বের দ্বিতীয় উচ্চতার ইটের তৈরি মিনার হতে যাচ্ছে। এখান থেকে ৫ ওয়াক্ত নামাজের আযান প্রচারের জন্য তৈরি হচ্ছে আলাদা কক্ষ। 

মসজিদের নির্মাণ কাজে ব্যবহার হচ্ছে চীন থেকে আমদানীকৃত রঙবেরঙের বিভিন্ন দৃষ্টিনন্দন টাইলস ও মার্বেল পাথর। মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ নির্দেশনায় মসজিদের নির্মাণ সামগ্রী শুল্ক মুক্তভাবে আমদানি করা হচ্ছে । মসজিদের দেয়ালে ও গম্বুজের গায়ে বসেছে সোনালী রঙের বিভিন্ন টাইলস যা সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিচ্ছে কয়েকগুন। মসজিদের পশ্চিম পাশের দেয়ালে বসছে পূর্নাঙ্গ পবিত্র কোরআন শরীফ। মসজিদে বসেই ৩০ পারা কোরআন শরীফ যে কেউ পাঠ করতে পারবে। মসজিদের মূল ফটকে বসছে আল্লাহর ৯৯ নাম। এতে ব্যাবহার হচ্ছে প্রায় ৫০ মন পিতল। সম্পূর্ণ মসজিদটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত থাকার কথা থাকলেও সাথে সাথে বসানো হচ্ছে পর্যাপ্ত বৈদ্যুতিক পাখা।

যমুনার শাখা নদী ঝিনাই বয়ে গেছে মসজিদের পশ্চিম পাশ দিয়ে। এঁকেবেঁকে বয়ে যাওয়া ছোট্ট নদীর পাশে প্রায় ১৫ বিঘা জমির উপরে নির্মিতব্য এই কমপ্লেক্সে শুধু মসজিদ নয় থাকছে আরো বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান। মসজিদের সাথেই ঝিনাই নদী ঘেষে পশিম পাশে নির্মিতব্য রয়েছে একটি বহুতল ভবন। এতে থাকছে দুস্থ নারীদের জন্য বিনামূল্যের চিকিৎসাসেবা। বৃদ্ধাশ্রম, এতিমখানা, দুস্থ মুক্তিযোদ্ধার পরিবারের পুনর্বাসন ব্যবস্থা ও বেকার যুবকদের জন্য তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা। মুসল্লীদের পারাপারের  সুবিধার জন্য তৈরি করা হবে ঝিনাই নদীর উপর তৈরি হবে সেতু। নির্মানশৈলীর এই কর্মযজ্ঞে যুক্ত হতে পারেন আপনিও। চাইলে অনলাইনের মাধ্যমেও দান কররে পারবেন এই সাইটে গিয়ে http://201gombujmasjid.org/

যাতায়াত:
ঢাকা থেকে এসি নন এসি বাসে টাংগাইলে রয়েছে চমৎকার যোগাযোগ ব্যাবস্থা। কল্যানপুর থেকে সোনিয়া ও সকাল সন্ধ্যা পরিবহনের এসি বাস আছে টাঙ্গাইল ও ধনবাড়ি পর্যন্ত। মহাখালী থেকে রয়েছে বিভিন্ন নন এসি বাস। নিরালা সুপার, ধলেশ্বরী বাসে টাঙ্গাইলে এসে অন্যান্য বাসে আসতে হবে পোড়াবাড়ি তারপর যেতে হবে গোপালপুর ।সরাসরি গোপালপুর আসার জন্য একমাত্র বাস রয়েছে মহাখালী থেকে দ্রুতগামী। ২০১ গম্বুজ মসজিদটি টাঙ্গাইল থেকে ৫০ কিলোমিটার ও গোপালপুর থেকে ৭ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত । গোপালপুর থেকে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, সিএনজি বা মাহিন্দ্রাতে যাওয়া যাবে দক্ষিণ পাথালিয়া। জনপ্রতি ভাড়া নিবে ৩০-৪০ টাকা। 

অল বাংলানিউজ ২৪

শেয়ার করুন

Advertising
allbanglanewspaper-link

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়

    Add